রেজাউল করিম চৌধুরীঃ
কর্মজীবনের একেবারে শুরুর দিকে এবং পরে আরও কয়েকবার আমাকে স্থান বা শহর পরিবর্তন করতে হয়েছে। যখনই আমাকে শহর পরিবর্তন হয়েছে, আমার স্ত্রী দুটি জিনিস সঙ্গে নিতে কখনো ভুলতেন না- একটি হলো টবসহ বাসক গাছ, আমাদের সন্তান বা পরিবারের কেউ সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হলে আমার স্ত্রী এই বাসক পাতার রস ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতেন। আমাদের সঙ্গে থাকা অন্য আরেকটি জিনিস হলো একটি বই, নাম-‘যেখানে ডাক্তার নেই’। মেক্সিকোর একজন হেলথ এক্টিভিস্টের লেখা বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছিলো গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র (জিকে)। বইটি থেকে আমরা অনেক উপকৃত হয়েছি।

কর্মসূত্রে আবার ঢাকায় ফিরে আসার পর আমি এবং আমার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নগর হাসপাতাল থেকে বই সংগ্রহ করতাম। আমরা সবসময় এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিতাম। আমার মেয়ে ফাতেমার প্রথম সন্তানের জন্ম এই হাসপাতালে। আমার শ্যালিকা রেবেকার প্রথম সন্তানের জন্মও এই হাসপাতালেই।

আমরা যখন বিভিন্ন সময় সাংঘর্ষিক রাজনীতি বা ধ্বংসাত্মক রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা করতাম, জাফরুল্লাহ ভাই আমাদের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করতেন। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে যখন আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা পোঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কয়েকজন প্রশিক্ষিত মাঠকর্মী তৈরির সিদ্ধান্ত নিই, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকেই আমরা কয়েকজনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এনে প্যারামেডিকস হিসেবে নিয়োগ করি।

আমি বেশ কয়েকবার জাফর ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর নগর হাসপাতাল অফিসে দেখা করেছি। একদিন আমার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের চর্মরোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা জানাতে গিয়ে বলেছিলাম, সম্ভবত এই রোগটা কাজের মেয়ের কাছ থেকে সংক্রমিত হয়েছে, কারণ তাঁরা বস্তিতে থাকে। আমার কথায় জাফরুল্লাহ ভাই খানিকটা রেগে গেলেন। তিনি বললেন, রেজা আমি আপনার কাছ থেকে এই ধরণের ধারণা আশা করি না। আমার দু:খ লাগে, অনেকেই নানা ধরণের রোগ-শোকের জন্য কাজের মেয়েদের দায়ি করেন। অথচ আপনার পরিবারের সদস্যও কিন্তু এই সংক্রমণের বাহক হতে পারে। এমন ছোঁয়াচে রোগের জন্য সবসময় কাজের লোকদেরকে দোষারোপ করা অন্যায়। জাফরুল্লাহ ভাইয়ের এই কথাগুলো আমার জন্য ছিলো একটি মহান শিক্ষা।

আমি জানি, আমাদের অনেকেই জাফরুল্লাহ ভাইয়ের কাছে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখেছেন। সেই কথাগুলো সবাইকে জানানো খুব প্রয়োজন, যাতে অন্য সবাই সেগুলো জানতে পারে- শিখতে পারে।

জাফরুল্লাহ ভাই আমাদের নায়ক, তিনি মারা যাননি। তিনি আমার সাথে আছেন, আমাদের সাথে বসবাস করছেন। তিনি আমাদের জাতীয় বীর। আমাদের তার জীবনী পড়তে হবে, তাঁর দর্শন নিয়ে, তাঁর কাজ নিয়ে গবেষণা করতে হবে। আমরা জাফরুল্লাহ ভাইয়ের বর্ণাঢ্য জীবন থেকে অনেক কিছু শিখতে চাই।

রেজাউল করিম চৌধুরী
নির্বাহী পরিচালক
কোস্ট ফাউন্ডেশন।