যে কোনো কিছুই প্রয়োজনের অতিরিক্ত করাকেই নেশা বলে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বলতে বোঝায় যা আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে, নর্মাল জীবন ব্যাহত হয়। অন্যকে অসুবিধায় ফেলে। নিজের উন্নতি আর শুভ চিন্তা কে রোধ করে সেটা প্রয়োজনের অতিরিক্ত।পৃথিবীতে কত ধরনের নেশাই না আছে। সেই দিক বিবেচনায় সকল নেশাকে আমার দৃষ্টিতে তিন শ্রেণীতে ভাগ করতে পারি।

এক -পড়ার নেশা, বাড়ির নেশা, ব্যবসার নেশা , ভ্রমণের নেশা, বাগান করার নেশা।,ধর্মের নেশা, ঘুমের নেশা।,টাকা জমানোর নেশা, ভালোবাসার নেশা, সত্য বলার নেশা, মানবসেবার নেশা, চুপচাপ থাকার নেশা, গান শোনার নেশা, ফুটবল খেলার নেশা, ক্রিকেট খেলার নেশা, খাওয়ার নেশা, মুরগী, হাঁস, ছাগল পালনের নেশা, জমি কেনার নেশা, কবিতা লেখার নেশা, গল্প লেখার নেশা, উপন্যাস লেখার নেশা, প্রবন্ধ লেখার নেশা, আড্ডা দেওয়ার নেশা, চিন্তা করার নেশা, সমালোচনা করার নেশা, সময় কাজে লাগানোর নেশা, নামাজ পড়ার নেশা, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের নেশা, উপকারের নেশা, নম্রতার নেশা, ভদ্রতার নেশা, ব্যায়ামের নেশা, ধ্যানের নেশা, জ্ঞান অর্জনের নেশা,

দুই – সময় নষ্ট করার নেশা, নারীর নেশা, চাঁদাবাজির নেশা, ধান্ধাবাজির নেশা, রাজনীতির নেশা, ক্ষমতার নেশা, মারামারির নেশা, চাপাবাজির নেশা, বাড়ির নেশা, গাড়ির নেশা, সন্ত্রাসীর নেশা, মিথ্যা বলার নেশা, বিয়ে করার নেশা, যৌতুকের নেশা, মদের নেশা, গাঁজার নেশা, টাকা খরচের নেশা, কিপটামির নেশা, জামা-কাপড় কেনার নেশা, প্রেমে ছ্যাঁকা দেওয়ার নেশা, প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়ার নেশা, পতিতালয়ে গমনের নেশা, বিয়ের নেশা, বকবক করার নেশা, জমি দখলের নেশা, দেশ দখলের নেশা, যুদ্ধের নেশা, স্বার্থবাদীর নেশা, রাত জেগে গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলার নেশা, ছেলের মেয়ে বন্ধুর নেশা, মেয়ের ছেলে বন্ধুর নেশা,

তিন- ইয়াবা (বাবা), ফেনসিডিল, হেরোইন, গাঁজা, চোলাই মদ, দেশি মদ, বিদেশি মদ, বিয়ার, রেক্টিফাইড স্পিরিট, ডিনেচার্ড স্পিরিট, তাড়ি, প্যাথেডিন, বুপ্রেনরফিন (টি.ডি. জেসিক ইঞ্জেকশন), ভাং, কোডিন ট্যাবলেট, ফার্মেন্টেড ওয়াশ (জাওয়া), বুপ্রেনরফিন (বনোজেসিক ইঞ্জেকশন), মরফিন, আইচ পিল, ভায়াগ্রা, সানাগ্রা, টলুইন, পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট ও মিথাইল-ইথাইল কিটোন৷ এছাড়া আরও জানা যায় কুত্তা-বিড়াল-সাপ-ব্যাং-টিকটিকির লেজ, কেরোসিন তেল, সাপের বিষ দিয়ে নেশা।

এই পৃথিবীটা বড়ই বিচিত্র। বিচিত্র নদী-নালা, খাল-বিল, সাগর, পাহাড়, হাওর, বিল, পাখির কিচিরমিচির, চাঁদের আলো, দিবসের সূর্য, শিল্পীর কণ্ঠের সুরেলা গান, শিল্পীর মুগ্ধকর অভিনয়, ঝর্ণার পানি, প্রিয়ার চোখ, আলতা রাঙা পা, নেতার ভাষণ সবই বিচিত্র। তার চেয়েও বিচিত্র এই পৃথিবীর মানুষ। যাকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির মধ্যে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এই পৃথিবীতে কত ধরনের মানুষ যে আছে তার হিসাব নাই। সাদা, কালো, বাদামি, সোনালি, মেরুণ, গৌর বর্ণের। আর ধর্ম আছে অনেক-হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্টান, জৈন, ইহুদি। আর ভাষা আছে অনেক বাংলা, ইংরেজি, আরবি, ফারসি, উর্দু, হিন্দি, তামিল, চাকমা, মারমা, স্প্যানিশ, মালয়, মান্দারিনসহ অসংখ্য ও অগণিত। এর সবই আশ্চর্য হওয়ার মত। মানুষের ভেতর আশ্চর্য রকম জিনিস হলো তার মন। তার চেয়েও বেশি আশ্চর্যজনক জিনিস হচ্ছে তার নেশা। এই মন দেওয়া-নেওয়ার ভালোবাসার নেশায় যে পড়েছে সে আর ফিরে আসতে পারেনি আর পারবেও না। এ ছাড়া আরো কত রঙের, প্রকারের নেশা আছে আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তাই আসুন আমরা খারাপ নেশাগুলো বর্জনের মাধ্যমে আমাদের জীবনকে আলোকিত করে গড়ে তুলি।


ড. আব্দুস সাত্তার
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক, ওয়াশিংটন ডি,সি