বদরুল ইসলাম বাদল
সভ্যতা বিকাশের অবিচ্ছেদ্য অংশ নারী।মানব সমাজের সৃষ্টি সৃজনের প্রতীকও তাঁরা।অপরদিকে আধুনিক বিশ্বে যেমন অনেক নারী স্বমহিমায় উদ্ভাসিত আলোকিত,তেমনিভাবে প্রতিটি সফল পুরুষের সাফল্যের পেছনেও কোননা কোন নারীর সহযোগিতা সর্বজনবিদিত।বলা হয় ,”পুরুষদের প্রেরণা এবং শক্তির উতস নারী”।যুক্তরাষ্ট্রের কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক নামকরা একদল মানুষের উপর গবেষণা করে দাবি করেছেন, “যে স্ত্রী তার স্বামীর সহযোগী, ওই স্বামী জীবনে বেশি সফলতা পান”। ধ্রুব সত্যের মত যার প্রতিফলন- বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী জীবনের সাথে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ছায়ার মতো জীবনের সবটুকু সময় লেগে থাকাই উল্লেখযোগ্য। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার সাফল্যের পেছনে স্ত্রী মিশেল ওবামার নাম বুক ফুলিয়ে বলে থাকেন।বিখ্যাত দার্শনিক মার্ক্সসের স্ত্রী জ্যানি মাক্সের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। মার্ক্সসের দারিদ্র্য পীড়িত উদ্বাস্তু রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গী ছিলেন তিনি। নিজে কাজ করে সংসারের হাল ধরে রেখেছিলেন বলে মার্ক্স বিশ্ব বিখ্যাত বইগুলো লিখতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার লেখা সমস্ত প্রবন্ধ এবং পান্ডুলিপি গুলো তার স্ত্রী জ্যানি নিজের হাতে কপি করতেন।জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সম্মানার্থে এক ভাষণে বলেছেন, ” তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা সামাজিক বিভিন্ন কাজে তার সঙ্গে স্বেচ্ছায় কাজ করেন ও তাকে সবসময় অনুপ্রাণিত করেন”। তার জীবনের সফলতার পেছনে বিরাট অবদান স্ত্রীর বলেও জানান তিনি। “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” বইয়ে বঙ্গবন্ধু বেগম মুজিবকে নিয়ে লিখেছেন , “রেনু (বেগম মুজিব) আমার সব দুঃখ কষ্ট, অভাব অনটন, কারাবরণ হাসিমুখে মেনে নিতে না পারলে আমি বঙ্গবন্ধু হতে পারতাম না”।ইতিহাসবিদদের অভিমত, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সংসার আগলে রেখেও বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী হিসেবে নিরলস ভাবে কাজ করে গেছেন।
বাংলা একাডেমির সাবেক সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বেগম মুজিব সম্পর্কে মন্তব্যে বলেন,”১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা,গণ-অভ্যুত্থান,ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের যেকোনো গনতান্ত্রিক আন্দোলনে বঙ্গমাতা সবসময় বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন”।
গ্রেট মুজিব কিংবা বঙ্গবন্ধু বিশ্বের প্রতিটি দেশের মানুষের কাছে পরিচিত একটি নাম। সংগ্রামের ছবক। শোষিত অবহেলিত মানুষের চেতনার আলোকবর্তিকা। বাংলাদেশ নামক দেশটির পরিচিতির সাথে অনেক বিদেশিরা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে থাকেন , “ও গ্রেট মুজিবের দেশ”? তবে একদিনেই তিনি গ্রেট মুজিব হয়ে উঠেনি।ধাপে ধাপে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববন্ধু হয়ে জগত জোড়া খ্যাতিলাভ করেন।তার এভাবে বেড়ে উঠার প্রতিটি বাঁকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।সংসারের সব দায়িত্বভার নিজের কাঁধে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে নির্বিঘ্নে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন ।অনেক সময় সন্তান সম্ভাবা স্ত্রীর পাশেও তিনি থাকতে পারতেন না। ১৯৪৬ সালে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় উপদ্রুত এলাকায় শেখ মুজিব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে সফর সঙ্গী ছিলেন।স্ত্রীর অসুস্থতার খবরে তিনি গোপালগঞ্জে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।জবাবে বেগম মুজিব স্বামীকে না আসার জন্য বারণ করে চিঠিতে লিখেন,”আপনি শুধু আমার স্বামী হবার জন্য জন্ম নেননি। এখন আপনার উপর অনেক বড় দায়িত্ব রয়েছে। । সমাজ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। এখন আপনাকে সমাজের জন্য কাজ করতে হবে।আমাকে নিয়ে উদ্বীগ্ন হবেন না।আমি নিজের খেয়াল রাখতে পারবো”।তখন বঙ্গবন্ধু বিষয়টি সম্পর্কে সোহরাওয়ার্দীকে অবহিত করলে সোহরাওয়ার্দী বলেন,”তুমি খুব ভাগ্যবান যে- সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে তোমার জীবন সঙ্গিনী বানিয়েছে”। বেগম মুজিব কতটা ধৈর্য্যশীল ছিলেন তার পরিচয় বহন করে এই বিষয়টি পর্যালোচনা করলেই বুঝতে পারা যায়। ১৯৩০ সালের ৮ আগষ্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহন করেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ যেমন একসূত্রে গাঁথা তেমনি বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের সাথে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অবিচ্ছেদ্য অংশ। দৃঢচিত্তের নিরহংকারী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের দেয়া সাহস এবং ভালবাসা বঙ্গবন্ধুকে দেশের কাজে মনোযোগী হবার সহায়ক হয়। বাংলাদেশের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমান মহাত্না গান্ধীর স্ত্রী কস্তরবা, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের স্ত্রী বাসন্তী দেবীর সাথে তুলনা করতে গিয়ে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে “বঙ্গমাতা” অভিধায় ভূষিত করেন।
ছয়দফা ঘোষণা পর বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসতে থাকে বঙ্গবন্ধুর উপর। বিভিন্ন ধরনের হুমকি এবং লোভও দেখানো হয়। ছয়দফা থেকে সরে আসার জন্য।তবে বঙ্গবন্ধুর ছয়দফা যে একদপা ছিল, বেগম মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন।তাই তিনি ছয়দফা থেকে সরে আসতে নিষেধ করেন বঙ্গবন্ধুকে। এবিষয়ে আলোচনা করার জন্য বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আসেন একদিন ফজলুল কাদের চৌধুরী। বেগম মুজিব তাকে বলেছেন, “ভাই আপনাকে একটা অনুরোধ জানাবো।শেখ মুজিবকে আইয়ুব খান আবারও জেলে ভরতে চান,আমার কোন আপত্তি নাই। আমাদের এই বাড়িঘর দখল করতে চান, তাতেও কোন দুঃখ পাবো না। আপনাদের কাছে আমাদের দুইজনেরই অনুরোধ, আমাদের মাথা কিনতে চাইবেন না।শেখ মুজিবকে মোলায়েম খাঁ বানাবার চেষ্টা করবেন না”
১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আইয়ুব সরকার অবৈধভাবে বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে আটক করে । প্রতিবাদে জ্বলে ওঠে গোটাদেশ।বেসামাল পরিস্থিতি বুঝতে পেরে বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে গোলটেবিল বৈঠক করার সীদ্ধান্ত নিলেন আইয়ুব খান ।তখনকার আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি নিয়ে আইয়ুবের সাথে গোলটেবিল বৈঠকের পক্ষে ছিলেন। কিন্তু বেগম মুজিব বন্দী স্বামীকে মেয়ে শেখ হাসিনার মাধ্যমে খবর পাঠালেন “প্যারোলে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি নিয়ে বত্রিশ নম্বরে আসবেন না।নিঃশর্ত মুক্তি নিয়ে তারপর বীরের বেশে গোলটেবিল বৈঠকে যাবেন”।উল্লেখ্য তখন ষড়ষন্ত্র মামলায় আরোও ৩৩ জন আসামি বন্দী ছিল। তাদের কারাগারে রেখে নিজের স্বামীকে প্যারোলে মুক্তিতে নিষেধ করেন তিনি।কারণ বেগম মুজিব বুঝতে পারছিলেন যে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে জনগণের জেগে উঠাকে সরকার সামাল দিতে পারবে না। পরিশেষে দেখা গেল বেগম মুজিবের চিন্তাই সত্য হয়ে গেল।গণ-অভ্যুত্থানে পাকিস্তান সরকার তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে নিঃশর্ত মুক্তি পান এবং মামলার অন্য বন্দীদের সাথে নিয়ে মুক্ত হয়ে আসেন।পরেরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারী তারিখে রেসকোর্স ময়দানে বিশাল সভায় ছাত্রজনতা তাকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করেন। আইয়ুব খান ক্ষমতা থেকে বিদায় দিয়ে চলে যায়।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,” বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কথাই রেখেছিলেন কারাবন্দী শেখ মুজিব। কারাগার থেকে বেরিয়ে জনগণের ভালবাসার “বঙ্গবন্ধু” হয়ে উঠে তিনি। তাই তার বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠার পেছনে বেগম মুজিবের সময়োপযোগী সীদ্ধান্তকে যুক্তিযুক্ত মানদন্ড হিসেবে নিয়েছেন”।সেই সময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রধান কৌঁসুলি তার বকেয়া ফি পরিশোধ না করায় কোটে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন।এই পরিস্থিতিতে বেগম মুজিব খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।ড.এম এ ওয়াজেদ মিয়া তার স্মৃতিচারণে লিখেছেন, “তখন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার খরচের অর্থ সংগ্রহ করতে কুপন ছাপায়।বেগম মুজিব তার সম্পর্কে ছোটভাই, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শেখ আকরাম হোসেন ও বঙ্গবন্ধুর আপন ফুপাতো ভাই মুমিনুল হক খোকার মাধ্যমে অতি কষ্টে ও
গোপনে টাকাপয়সা সংগ্রহ করেন।ফলে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা পরিচালনা করা সম্ভব হয়।সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের নেপথ্যে ও ছিল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অনন্য অবদান। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় যাবার আগে তিনি শেখ মুজিবকে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেছিলেন, “মনে রেখ তোমার সামনে জনতা,পিছনে বুলেট। সুতরাং কারও তৈরি করা কথা নয়।তোমার মন যা চায়,তোমার মনে যে কথা আছে তুমি তাই বলবে”।সেদিনই মুজিব তার রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণ সম্পুর্ন অলিখিত ভাবে অকপটে উপস্থাপন করেন।যাঁর ফলশ্রুতিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে জনতার মিশিল।
তারপরের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি কাজেই বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের সমর্থন ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২ লাখের বেশি নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেছে।নির্যাতিত অধিকাংশ নারীদের তাদের পরিবার মেনে নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে এসকল বীরাঙ্গনা নারীরা সমাজে উপেক্ষিত হয়ে অসহায় হয়ে পড়ে। তখনই জাতির পিতা তাদের পাশে এসে অবিভাবক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, “ধর্ষিতা মেয়ের বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও,শেখ মুজিব রহমান। আর ঠিকানা লিখে দাও ধানমন্ডির বত্রিশ।অন্যদিকে ১৩৭৮ বঙ্গাব্দের ১৭ই ফাগুন বাংলার বাণী পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়,সেসময় বেগম মুজিব ঢাকায় দুটি ক্লিনিক পরিদর্শন করে বীরাঙ্গনাদের
খুঁজখবর নিয়ে শান্তনা প্রদান করে তাদের উদ্দেশ্যে বেগম মুজিব বলেছেন, “এই বীরাঙ্গনা নারীদের জন্য নারীরা গর্বিত। তাদের লজ্জা কিংবা গ্লানিবোধের কোন কারণ নেই”। নিঃসংকোচে তিনি তাদের বলেছেন “আমি তোমাদের মা”। ১৯৭২ সালের এপ্রিলে দৈনিক বাংলার বাণীতে এক সাক্ষাৎকারে বেগম মুজিব বলেছিলেন, ” প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হিসেবে আমার পরিচয় নয়,আমি বাংলাদেশের একজন বধু,একজন মা”।বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পড়ালেখা খুব বেশি করেননি।অবসরে বই পড়তেন প্রচুর।তবে স্মৃতিশক্তি ছিল অত্যন্ত প্রখর।বঙ্গবন্ধু তাই তাকে “জীবন্ত ডায়েরি” হিসেবে উল্লেখ করতেন। নিজের বুদ্ধিমত্তা, অসীম ধৈর্য্য ও সাহস দিয়ে মোকাবিলা করবার শক্তি রাখতেন তিনি । নিজের এগুণ দিয়ে সন্তানদের মানুষ করেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু বেগম মুজিবের উপর পুরাপুরি ভরসা করতেন। মাসের পর মাস জেল বন্দী বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে পরিবার সন্তানদের লেখাপড়া একহাতে সামলিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে দলের বিভিন্ন সংকটে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।দলের অর্থসংকটে তিনি সহযোগিতা করতেন। নিজের অলংকার বিক্রি করে তিনি দলের জন্য টাকা দিয়েছিলেন ।ছয়দফা প্রচারণা কালে দলের অর্থসংকটে নিজের একটি মাত্র ফ্রিজ বিক্রি করে টাকা দিয়েছিল বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বড় দুই ছেলে শেখ জামাল শেখ কামালকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন।বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহেনা স্মৃতিচারণে বলছেন, “তিনি বাবাকে শত দুঃখ কষ্টে মধ্যে অনুপ্রাণিত করেছেন, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বিষয়ে মার ইতিবাচক সমর্থন ছিল” ।(আমার মা ফজিলাতুন্নেছা :শেখ রেহেনা। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা স্মারক গ্রন্থ।) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে “আম্মার উত্সাহে জাতির পিতা “অসমাপ্ত আত্মজীবনী” লিখেছিলেন। জাতির পিতার ডায়েরি গুলো বঙ্গমাতাই সংরক্ষণ করে রাখতেন”।
কিছু মৃত্যু ইতিহাসের মোহনায় শিক্ষনীয় চিন্তা-জাগানিয়া ছবক হয়ে থাকে।চির লড়াকু বাঙালী জাতির হাজার বছরের ইতিহাস অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন “৩২ নম্বর বাড়িতে যখন আমার বাবাকে হত্যা করা হয়, আমার মাকে খুনিরা বলেছিল আপনি চলে যান।আমার মা বললেন “কোথাও তো যাব না।ওনাকে খুন করেছো আমাকেও শেষ করে দাও।আমি এখান থেকে একপা ও নড়বো না”।তিনি খুনিদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চান নাই।
বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিসকে তার প্রচারিত দর্শনের জন্য কতৃপক্ষ হেমলক বিষ পান করিয়ে মৃত্যু দণ্ডাদেশ কার্যকর করে বিগত আড়াই হাজার বছর আগে।কিন্তু তিনি পালানোর সুযোগ পেয়েও পালানোর চেষ্টা কিংবা ক্ষমা ভিক্ষা চান নাই। সত্যের ব্রতে অটল থেকে মৃত্যুকে বরণ করে অমরত্ব হয়ে রইল আজো ইতিহাসের পাতায় দার্শনিক সক্রেটিস ।তেমনি ভাবে বলা যেতে পারে বেগম মুজিব মৃত্যুকে বরণ করে নেয়াকে খুনীদের বিরুদ্ধে তেজস্বী প্রতিবাদও বলা যেতে পারে।আর সে মৃত্যু বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সাথে ইতিহাসে অমর হয়ে রইলো । রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, “মৃত্যু মানে আলো নেভানো নয়,এটি কেবল প্রদীপ জ্বালিয়ে দেওয়া,কারণ ভোর হয়েছে”।বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিটি সংগ্রামে, দুঃসময়ে বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।তিনি ছিলেন জাতির পিতার বন্ধু, পরামর্শক, সমর্থক।ধুপের মতো নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অবস্থানকে হিমালয়সম আসনে অধিষ্টিত করতে তার সারাজীবনটাই বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের সাথে ছায়াসঙ্গী হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন ।জয় বাংলা।
———————————–
বদরুল ইসলাম বাদল
সদস্য বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কেন্দ্রীয় কমিটি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।