যোগ্যতার অভাব

প্রকাশ: এপ্রিল ৩০, ২০২৪ ১:৫০ am , আপডেট: এপ্রিল ৩০, ২০২৪ ১:৫৮ am

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


যোগ্যতার অভাব
প্রতীকী ছবি: সিবিএন

সাজু বিয়ের উপযুক্ত হয়েও বিয়ে করতেছে না। কারণ, সে তার মনের মতো মেয়ে পায় না।  তার বাবা- মা অনেক মেয়ে দেখছে ছেলের জন্য।  বাবা-মা পছন্দ করে আসে আর সাজু গিয়ে পছন্দ হয়নি বলে বিয়ে না করার কথা বলে দেয়। একদিন সাজুকে বাবা-মা বললো___

– এই সাজু কাপড়-চোপড় পরে নাও। আজকে একটা মেয়ে দেখতে যাব।
– মা, দেখে কোন লাভ হবে না।
– কেন? মেয়েটা খুবই লক্ষী। খুবই সুন্দর।  এখনও পড়াশোনা করে।
– তবুও মা, আমার মনে হয় তোমরা আবার ভুল করতেছ। আমার পছন্দ হবে না।
– পছন্দ হোক বা না হোক। তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে আসো। কোন কথা বলবা না।
– ওকে। তোমাদের ইচ্ছা।

বাবা-মায়ের কথা মতো সাজুও গেল মেয়ে বাড়িতে। সবাই মিলে অনেক্ষণ কথা বলার পর মেয়েটির মা মেয়েটিকে তাদের সামনে আনলো। সাজু অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। সে মনে মনে ভাবতেছে সে মনের মানুষ পেয়ে গেছে। রীতিমত সবাই পছন্দ করলো। সাজুও দ্বিমত করলো না।  মেয়ের বাবা-মাও সাজুকে পছন্দ করলো। সাজুর বাবা-মা এবং মেয়ের বাবা-মা সবাই মিলে বিয়ের কথা বার্তা বলতেছে। আর সাজু ও মেয়েটি পরিচয় হওয়ার জন্য একদিকে গেল।

সাজু বুঝতে পারতেছে না কি বলে কথা শুরু করবে। অবশেষে…….
– কেমন আছেন?
– জ্বী, ভালো। আপনি কেমন আছেন?
– আমিও ভালো আছি। আচ্ছা আমরা কি একে অপরের সাথে পরিচয় হতে পারি? আসলে ক’দিন পরেই যেহেতু আমরা এক হয়ে যাব সেটে একটু পরিচয় হলে, একজনের সম্পর্কে অন্যজনে জানলে হয়তো ভালো হবে। তাই আর কি।
– হ্যা, অবশ্যই। বলেন আমার সম্পর্কে কি জানতে চান?
– আগে নামটা বলেন? বাকিগুলো পরে বলতেছি।
– আমার নাম রিফা। পুরো নাম শায়লা শাবরিন রিফা। আপনার?
– পুরো নাম তানবীর মাহমুদ সাজু। সবাই সাজু বলে ডাকে। আপনি কি এখনও পড়াশোনা করেন নাকি কিছু একটা করেন?
– আসলে এখনো  Admission আছে  মেডিকেলে।
– তারমানে আরো পড়ার ইচ্ছে আছে?
– আসলে কি বলবো আপনাকে ভাবতেছি। আমাদের পারিবারিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেছে। যার কারণে পড়তে পারতেছি না। আরো ৫ বছর লাগবে পড়াশোনা শেষ হতে। কিন্তু সব আশা, স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল আমার।


– যদি কেউ একজন আপনার সমস্ত খরচ বহন করে আপনার স্বপ্ন পূরণের জন্য। তাহলে কি আপনি পড়বেন?
– পড়ার অনেক ইচ্ছে।  কিন্তু এতো বছর আমার খরচ কে বহন করবে? আর কেনই বা করবে?
-আমি করবো। কারণ, আমার ভবিষ্যত যাকে নিয়ে তার স্বপ্ন পূর্ণ করাতো আমার দায়িত্ব।  যায় হোক, আমি আছি। আপনি পড়াশোনা করেন। দরকার হলে এখন বিয়ে হবে না। ৫ বছর পরে যেদিন ডাক্তার হয়ে বের হবে সেদিন বিয়ে করবো।

এরপর সাজু এবং রিফা দুজনে অনেক কথা বললো। অবশেষে সাজু বাবা-মাকে বললো রিফার পড়াশোনা শেষ হলেই বিয়ে করবো। এর আগে না। রিফার বাবা-মাও খুশি হয়ে রাজি হলো। এরপর চলে গেল তারা।
এরপর মেয়েটার সাথে ফোনে প্রায় কথা হয়। আর রিফার পড়াশোনার সমস্ত খরচ সাজু বহন করতেছে। এভাবে যেতে যেতে তিন বছর চলে গেল। একদিন রিফার সাথে ফোনে কথা বলতেছে সাজু __
– কেমন আছ?
-ভালো। তুমি?
– তুমি ভালো থাকলে আমি এমনিতেই ভালো থাকি। কি কর এখন?
– কিছু না।  একটা কথা বলবো। যদি রাগ না করো এবং কিছু মনে না কর।
– বলো। তোমার উপর কি রাগ করা যায়।
– তুমি আজ থেকে আমার সাথে ফোনে কথা বলবে না।  কারণ, আমার পড়াশোনা শেষ করতে আর বেশি সময় নেই। এভাবে যদি ফোনে কথা বলি তাহলে পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে। তাই একটু কথাটা রাখলে উপকার হবে।
– আচ্ছা, ঠিক আছে। পড়াশোনা কর ভালো করে।
এরপর সাজু বিচলিত। কারণ, রিফার মুখ থেকে যখন কথা না বলার কথাটি শুনলো তখন মনে হলো আকাশটা ভেঙে মাথার উপর পরলো। তবুও মনের মানুষটার স্বপ্ন পূরণ করতে সব মেনে নিল। কোন যোগাযোগ রাখলো না। সময় মতো পড়ার খরচ পাঠিয়ে দিতো। পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। সামনে পরীক্ষা। সাজু মনে মনে ভাবলো দু’বছর ধরে কোন কথা হয় নি, দেখাও হয় নাই, যেদিন প্রথম পরীক্ষা সেদিন দেখা করবে। রিফার পরীক্ষা শুরু হলো। অথচ পরীক্ষার কথাটাও রিফা জানাই নি সাজুকে। পরীক্ষা শেষ হলো এবং ফলাফলও পেয়ে গেল। ডাক্তার হয়ে বের হলো। তারপরও কিছুই জানাই নি সাজুকে। একদিন রিফার সাথে দেখা করলো সাজু। বললো, এতবড় একটা খুশির সংবাদ আমাকে জানাও নি কেন? যায় হোক সমস্যা নেই। এতে আমি কিছু মনে করি নাই।  এবার সাজু বিয়ের কথা বলে। তখন রিফা বললো
– আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।
– কিন্তু কেন?
– কারণ, তুমি আর আমি এক নয়। তুমি আমার যোগ্য নয়।  তাই বিয়ে করতে পারবো না।
– কিন্তু ৫ বছর আগে থেকেই যে একটা কথা ঠিক হয়ে আছে। সেটা কি ভুলে গেলা।
– ৫ বছর আগে আমি এতো কিছু বুঝতাম না। আজকে সব কিছু বুঝি। তাই পাঁচ বছর আগের সব কথা আমি ভুলে গেছি।
— ওকে। ভালো থেকো। যোগ্য কাউকে জীবন সঙ্গী করে নিও।


এরপর সাজু অশ্রুসজল চোখে কান্না করতে করতে চলে আসলো। যাকে সে পাঁচ বছর ধরে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যোগ্যতা অর্জন করিয়েছে সেই বলে আজ তাকে অযোগ্য বলে বিয়ে করলো না। কয়েকদিন পরে খুব অসুস্থ হয়ে পড়তে।  তাকে বড় একটা হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। চিকিৎসা করা হচ্ছে। কিন্তু কোন আশা নেই বাঁচার। তবুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে হাসপাতালে সাজুর চিকিৎসা চলতেছে সেই হাসপাতালে রিফা ডাক্তার হিসেবে কর্মরত। একদিন হাসপাতালের কিছু ডাক্তার মিলে তাকে চিকিৎসা করার জন্য গেল। সেখানে সাজুকে একটা ডাক্তার বললো,” এই ছেলেকে পাঁচ বছর আগে বারণ করছিলাম কিডনি বিক্রি না করতে।” তখন অন্যন্য ডাক্তারের সাথে রিফাও ছিল। রিফা বললো,


-” কি হয়েছিল স্যার?”
– আজ থেকে পাঁচ বছর আগে এই ছেলেটি এই হাসপাতালে আসছিল কিডনি বিক্রি করতে।আমি তাকে অনেক বারণ করছিলাম।  কিন্তু সে বলেছিল তার বউকে ডাক্তার বানানোর জন্য কিডনি বিক্রি করতেছে। কিন্তু দেখ কি নির্মম পরিহাস, যাকে সে কিডনি বিক্রি করে ডাক্তার বানালো,যোগ্য করলো সে আজ তাকে অযোগ্য বলে বিয়ে করলো না।  তার স্বপ্ন ছিল তার বউ তাকে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তুলবে।  কিন্তু স্বপ্ন তার পূরণ হলো না। ”
ডাক্তারের কথা শুনে সে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। কান্না করতেছে। তখন সাজুর বাবা-মা বললো,” এখন কেঁদে আর কি হবে? কিছু করার নেই।  অনেক দেরিতে বুঝতে পারলি মা। অনেক দেরি হয়ে গেছে।”


আবদুল নবী
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, কক্সবাজার সিটি কলেজ