-মোহাম্মদ নাইম উদ্দিন
১৯৭১ সালের জুলাই মাস। রাত তখন ১২ টা পার হয়ে গেছে। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার নলচিরা বাজারের অনতিদূরে কাউয়ার চর খাল দিয়ে কম বেশি ১০০ জন মানুষ নৌকা যোগে এলাকা ছেড়ে যাচ্ছে। তাদের কেউ চিরতরে দেশান্তরিত হচ্ছে শরণার্থী হয়ে, কেউবা দেশকে শত্রুমুক্ত করতে ভারতে যাচ্ছে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ নিতে। এলাকায় পাক বাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও গ্রামকে গ্রাম অগ্নিসংযোগের বিভৎসতায় সহযোদ্ধাদের কারো কোন পূর্ব প্রস্তুতি নেই। সহযোদ্ধা হিসাবে পেয়েছি তমরদ্দি ইউনিয়নের আব্দুল ওহাব, রণজিত দাশ হরণী ইউনিয়নের ইয়াহিয়া কাইসার প্রমুখকে।পরবর্তীতে আরো অনেক যোদ্ধা বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছিল।
ভোর হওয়ার আগেই নৌকা যোগে ও পায়ে হেঁটে আমরা ও হিন্দু শরণার্থীরা-যারা দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যাচ্ছে চিরতরে, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটে পৌঁছি। সেখানে একটা প্রাইমারী স্কুলে বিশ্রাম নিয়ে দিন পার করি । রাতে আবার পায়ে হেটে সেনবাগের কানকির হাটে পৌঁছি। আমাদের গন্তব্য ছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যস্থ যুদ্ধ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে।পথ প্রদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন হাতিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা কচি মিয়া।আমরা হেঁটে হেঁটে কুমিল্লায় পৌঁছি এবং সাতবাড়িয়া হয়ে ত্রিপুরা রাজ্যের ছোত্তাখোলা পৌঁছালাম। ছোত্তাখোলা বাজারে আমরা শ খানেক মানুষ এক রাত অবস্থান করলাম।পরের দিন পায়ে হেঁটে রাজনগর ইয়থ ক্যাম্পে পৌঁছালাম ।
ইয়থ ক্যাম্প ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জমায়েত কেন্দ্র- সেখানে আমরা ১৮-২০ দিন অবস্থান নিয়েছি এই আশা নিয়ে যে, যে কোন সময় যে কোন স্থানে যুদ্ধ প্রশিক্ষণে যেতে হতে পারে। পরবর্তীতে রাজনগর ইয়থ ক্যাম্প থেকে আমাদের দলের ৫০-৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা ত্রিপুরার বড় কাসারি নামক স্থানে ট্রেনিং গ্রহনের উদ্দেশ্যে যাই।আমরা নিজেরাই সেখানে নতুন করে ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করি। কিন্তু সাপ্তাহ খানেক ট্রেনিং করার পর বিভিন্ন ধরণের অব্যবস্থাপনা দেখা দেয়।ইতিমধ্যে কিছু প্রশিক্ষণার্থী গোপনে রাজনগর চলে আসলে ক্যাম্প ভাঙার উপক্রম হয়। পরে বাকিরা সিদ্ধান্ত নিয়ে উদয়পুর চলে আসি। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের এম পি নুরুল হক সাহেব উদয়পুরে আমাদের কয়েক বেলা খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করেন। উদয়পুরে দুই দিন আবস্থানের পর আমাদের পুরো টিম পুনরায় রাজনগর চলে আসে।রাজনগর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপণা কর্তৃপক্ষ অতি শীঘ্রই প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য আমাদেরকে উম্পি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে পাঠায়।সেখানে ভারতীয় সেনা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে ২১ দিন কঠিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের টিমকে যুদ্ধ পরিচালনা দপ্তর মেলাঘরে পাঠানো হয় ভারতীয় সেনা বাহিনীর যানযোগে।
সে সময় মেলাঘরে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে অস্ত্র-সস্র বন্টনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন ০২নং যুদ্ধ সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ। মেলাঘরে অবস্থানকালীন সময়ে ভারতের সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের চৌদ্দগ্রামস্থ গুনমতি রেলস্টেশন এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধাদের একটি স্বশস্র প্রশিক্ষিত দল গুনমতি রেলস্টেশনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে দূর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন পয়েন্টে বাংকার বা বড় গর্ত খননর করে সেখান থেকে ভারি অস্ত্র- সস্র দিয়ে গোলা বর্ষণ/ আক্রমণ করতে থাকলে পাক বাহিণীও পাল্টা জবাব দিতে থাকে।বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও রাসদ শেষ হয়ে যেতে পারে আশংকায় অতিরিক্ত শক্তি হিসাবে আমাদের ৫০ জন যোদ্ধাকে অস্ত্র শস্র সহ গুণমতি রেলস্টেশনে পাঠানো হয়। আমাকে উক্ত সৈন্যদের ট্রুফ্স কমান্ডার হিসাবে খালেদ মোশাররফ সাহেবের কাছ থেকে ট্রুফ্স রেজিস্টারে স্বাক্ষর করে অস্ত্র-শস্র রিসিভ করতে হয়েছিল। আমরা অতিরিক্ত যোদ্ধারা হামাগড়ি ( ক্রয়েলিং) দিয়ে দিয়ে মুল যোদ্ধাদের বাংকারে ঢুকে পড়ি এবং নতুন যোগ হওয়া এল এম জি, মর্টার ও স্টেনগান দিয়ে আক্রমণ সানাতে থাকি। অতিরিক্ত ফৌজ যাওয়ার পর দিনে ও রাতে দেড়দিন যুদ্ধ চলল। মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে ঘিরে ব্যাপক আক্রমণ চালালো। ফলে পাক বাহিনীর পক্ষ থেকে আক্রমন ক্রমশ কমে যেতে যেতে এক সময় বন্ধ হয়ে যায়।তারা শক্তিহীন হয়ে পড়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের রাসদ-খাবার একেবারেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমাদের বাংকার ছিল বিস্তির্ণ আখ ক্ষেতের সাথে লাগোয়া। পেটের ক্ষুদায় আমরা সবাই আখ খেতে থাকলাম- কারন আমাদের সাথে আনা খাবার-দাবার পূর্ব হতে বাংকারে অবস্থান নেয়া মুক্তিসেনাদের সাথে ভাগাভাগি করতে হয়েছিল।
এই অপারেশনে আমার সাথে পূর্ব পরিচিত হাতিয়া উপজেলার সহযোদ্ধা হিসাবে অংশ নিয়েছিলেন আব্দুল ওহাব, নুরূল আমিন ও রণজিৎ দাশ। অবস্থা দৃষ্টে আমরা বুঝতে পারি তাদের শক্তি শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ফায়ারেও কোন জবাব না আসায় বুঝতে পারলাম তারা পালিয়ে গেছে।কিছু সময় পরে সবাই আস্তে আস্তে ব্যাংকার থেকে বের হয়ে এগুলেও তাদের কোন সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না। চারদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের জয় বাংলা ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠল।অনেক রাজাকার পাকবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্য থেকে ১০ জন রাজাকার ও ৩ জন পাক সেনা নিহত হল এই অপারেশনে।মুক্তিযোদ্ধা শিবিরের কোন সেনা হতাহতের খবর পাওয়া গেল না। নিহত সৌন্য ও রাজাকারদের রেখেই তারা উত্তর দিকে পালিয়েছিল। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা পুনরায় সংঘবদ্ধ হয়ে মোট ১৩ টি লাশ নিয়ে মেলাঘরে ফিরে আসি এবং অভিনন্দিত হই।
মেলাঘর যুদ্ধ পরিচালনা ক্যাম্পে দুইদিন বিশ্রাম নিই এবং আমাদের সাথে থাকা অস্ত্র স¯্র অস্ত্রাগারে জমা দিই। অতপর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পুনরায় আমাদেরকে অস্ত্র-স¯্র যেমন- স্টেনগান,এস এল আর,রাইফেল, এল এম জি গ্রেনেড, বারুদ ও মাইন সরবরাহ করা হয়।হাতিয়া ও রামগতি, অঞ্চলের ২২ জন মুক্তিযোদ্ধার ট্রুফ্স কমান্ডার হিসাবে রেজিস্টারে স্বাক্ষর করে পুনারায় আমি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অস্ত্র-স¯্র রিসিভ করি।মেলাঘর থেকে বিদায় নেয়ার পার ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর গাড়ি আমাদেরকে রাজনগর ছেড়ে দেয়। রাজনগর এক দিন অপেক্ষা করার পর আমরা হেঁটে হেঁটে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ির পশ্চিম দিক হয়ে লক্ষীপুরের দক্ষিণ দিকে। অতপর আরো দক্ষিনে অগ্রসর হয়ে রামগতি চলে আসি। রামগতির বিবির হাঁটের নিকটে আন্ডার চরে মানুষের বাড়ি ঘরে আমরা ৪/৫ দিন অবস্থান করি । রামগতির সার্বিক পরিস্থিতি অবলোকন করতে থাকি এবং নিজ জন্মভূমি হাতিয়ায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করি।রামগতির আওয়ামীলীগ নেতা আজাদ মিয়া ও স্থানীয় জনসাধারন আমাদের খাওয়া দাওয়ার বন্দোবস্ত করেছিল।
সহযোদ্ধারা হাতিয়া অপারেশনের জন্য মুখিয়ে ছিল যদিও আমাদের আগেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক গ্রুপ মুক্তিযোদ্ধা হাতিয়া দ্বীপে প্রবেশ করেছে বলে খবর পাই। রামগতিতে অবস্থান কালীন সময়েই পাকিস্তান নেভীর দানবাকার জাহাজ দুই দুই বার হাতিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নোঙ্গর করে থাকা, মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামীলীগ নেতা ও হিন্দুদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন জ্বালিয়ে দেয়া-বিশেষ করে আফাজিয়ার আওয়ামীলীগ নেতা তালুক মিয়ার বাড়ি পুড়ে দেওয়া, দেলোয়ার উকিলের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, হাতিয়া টাউনের হিন্দুপাড়া পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া, অসংখ্য স্থানে নারী ধর্ষণ, অত্যাচার ও নির্যাতনের খবর আমাদের হাতে আসে। হাতিয়ার সোসিয়্যাল ও পলিটিক্যাল কালফিটদের তালিকা এবং তাদের দ্বারা কিভাবে এলাকায় নিরীহ মানুষ হত্যা, অত্যাচার ও নির্যাতনেরর শিকার হয়েছিল সেসব তথ্য আমাদের হাতে আসে।রামগতি তথা উত্তর হাতিয়ায় ৪/৫ দিন অবস্থানেরপর এক রাতে পায়ে হেঁটে ও নৌকাযোগে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা হাতিয়ায় প্রবেশ করি।
হাতিয়াতে আমাদেরকে খুব বেশী ভূমিকা রাখতে হয়নি কারণ ইতিমধ্যে পাক হানাদার বাহিনী হাতিয়া ত্যাগ করেছিল ৷ হাতিয়ায় এসে আমরা পূর্ব থেকে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগাযোগ করি। হাতিয়াতে থাকা রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে গেছে। তথাপি শান্তি কমিটির কিছু সদস্য তখন ও হাতিয়ায় অবস্থান করছিল ৷
আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভাবে অপারেশন পরিচালনা করি – বাড়ি থেকে ধরে এনে শাস্তি প্রদান করি। নোয়াখালী, ঢাকা, ও চট্টগ্রাম থেকে আসা ট্রলার ও জাহাজের উপর এবং পাকিস্তান নেভীর জাহাজের উপর তীক্ষœ নজর রাখা আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ রুটিন দায়িত্ব ছিল। কারণ অনেক রাজাকার ও শান্তি কমিটির লোক নিজ পরিবার ও কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষতি সাধন করতে সদা তৎপর থাকত ৷ এছাড়া শক্তিশালী প্রশাসন না থাকায় এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ধর্ষন ও অত্যাচার নির্যাতিন রোধে আমরা মুক্তিবোদ্ধরা সদা তৎপর ছিলাম। এতে জনগনের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের একটা আস্তার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে যেসব সংখ্যালঘু তখনও দেশান্তরিত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকার কারনে তারা শেষ পর্যন্ত জন্মভূমিতে থেকে গেছে। রামগতি ও হাতিয়া একই যুদ্ধ জোনের অধিভুক্ত ছিল ৷ নভেম্বর /৭১ এর শুরুর দিকে রামগতিতে একটা বড় অপারেশন চালানোর জন্য হাতিয়ার মুক্তিযোদ্ধদের ডাক পড়ল ৷ হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে রাতের আঁধারে গিয়ে যোগ দিল সেই অপরেশনে ৷ রামগতি বাজারের দক্ষিণে নদীর ধারে বেডি বাঁধের বাইরে একটা সাইক্লোন শেল্টারে পাকবাহিনী তাদের ক্যান্টনমেন্ট ও টর্সার সেল গড়ে তুলেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা উক্ত ক্যান্টনমেন্ট আক্রমনের পরিকল্পনা গ্রহন করে । রামগতিতে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা পর্যাপ্ত না থাকায় হাতিয়ার মুক্তিযোদ্ধারা ও এই অপারেশনে যোগ দেয়।
ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ পূর্ব এই ৩ দিকে অবস্থান নিয়ে সাইক্লোন শেল্টারকে লক্ষ্য করে একযোগে গুলিবর্ষণ করতে থাকি। দক্ষিণ দিকে নদী৷ হাতিরা উপজেলা থেকে এই অপারেশনে সহযোদ্ধা হিসাবে পেয়েছি হরণী ইউনিয়নের ফয়েজ উদ্দিন, রফিক উদ্দিন, মোঃ জাবের, আবুল খায়ের, গিয়াস উদ্দিন এবং তমরদ্দি ইউনিয়ন থেকে যোগ দিয়েছিল আব্দুল ওহার, নুরুল আমিন ও রণজিত দাশ প্রমুখ। আমাদের তিন দিকের আক্রমণে পাক বাহিনী প্রথমে কিছুটা এলোমোলা হয়ে গেলেও অচীরেই তারা ব্যাপক পাল্টা আক্রমন ও গোলাবর্ষন শুরু করে। প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী আক্রমন পাল্টা আক্রমন চলতে থাকে ৷ আমাদের গোলাগুলির আঘাতে সাইক্লোন শেল্টারের দেয়াল ও দরজা জানালা ঝাঁঝরা হতে থাকে। স্থানীয় জনসাধারনের মধ্যে অনেকেই যার যার সাধ্যমত অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে আমাদের সাথে যুদ্ধে যোগ দেয়। কিন্তু সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ পাকিস্তান নেভীর একটা জাহাজ অনবরত গুলি ও গোলাবর্ষণ করতে করতে রামগতি উপকূলে সাইক্লোন শেল্টারের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। পাকিস্তান নেভীর ব্যাপক গুলি ও গোলাবর্ষণে মুক্তিযোদ্ধাদের দক্ষিণ পূর্ব ঘাঁটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়, তবে কেউ হতাহত হয়নি। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধারা যখন হত বিহবল হয়ে পড়ে ঠিক এমন সুযোগে সাইক্লোন শেল্টারের নিকটে ভেড়ানো ট্রলার যোগে পাক- মিলিশিয়ারা পালিয়ে যায়। কিন্তু ভোলার অদূরে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তাদের পুরো দল ধরা পড়ে ৷ এদিকে তীর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নেভীর জাহাজকে লক্ষ্য করে তুমুল গোলাবর্ষন করতে থাকে ৷ গোলার আঘাতে জাহাজের কিছু কিছু স্থানে আগুন ধরার উপক্রম হয় ৷ গুলি ও গোলা বর্ষনের তীব্রতায় নেভীর জাহাজটি টিকতে না পেরে পিছু হটে এবং পালিয়ে যায় ৷ ফলে দুপুর নাগাদ আমাদের অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। আমরা হাতিয়ায় ফিরে আসি। এর মাধ্যমে আমার স্বশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের যবনিকাপাত হয়।
বেসামরিক গেজেট নং- ৫৩
লাল মুক্তিবার্তা নং: ০২০৯০৬০০৩৫
পিতা: মৌলভী শাহা আলম
মাতা: উম্মে কুলসুম বিবি
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ঠিকানা : গ্রাম: চিত্রাখালী, ইউনিয়ন: হরণী, উপজেলা: হাতিয়া , জেলা: নোয়াখালী।
বর্তমান ঠিকানা: গ্রাম : হাসপাতাল পাড়া,০৩ নং ওয়ার্ড, লামা পৌরসভা, উপজেলা: লামা, জেলা: বান্দরবান।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।